জেলার খবরফিচারশুক্রবারের বিশেষ

রাঙাবালী হতে পারে পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

পটুয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের পাদদেশে অবস্থিত রাঙ্গাবালী উপজেলা। যাকে বলা যায় চোখ জুড়ানো রূপালী ‌রুপ সৌন্দর্য দর্শনীয় স্থান । নদী, বালুচর, পাখপাখালি ও বন্যপ্রাণী- সব মিলিয়ে উপভোগ করার মতো একটি স্থান হচ্ছে রাঙ্গাবালী। পর্যটকরা মনে করেন, সংশ্লিষ্টদের যথাযথ উদ্যোগে এই স্থানটি হতে পারে পর্যটনের একটি কেন্দ্রবিন্দু। পটুয়াখালী প্রতিনিধি মো. ফিরোজ ফরাজির পাঠানো তথ্যে, নিউজ নাউ বাংলার আজকের বিশেষে থাকছে, দর্শনীয় স্থান রাঙ্গাবালীর কিছু তথ্য।

রাঙ্গাবালীর অবস্থান: পটুয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের পাদদেশে উত্তরে চালিতাবুনিয়া নদী, আগুনমূখা নদী ও চর বিশ্বাস, পশ্চিমে রামনাবাদ চ্যানেল ও কলাপাড়া উপজেলা এবং পূর্বে চর ফ্যাশন উপজেলার চর কুররী-মুকরী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।

লাল

উপজেলার নামকরণ: রাঙ্গাবালী উপজেলার নামকরণের সঠিক ইতহাস জানা যায়নি। তবে কথিত আছে যে, সাগরবক্ষে নতুন বালুচর সৃষ্টির ফলে কালের বিবর্তনে এই বালুচরের বালু ছিল লাল। এই ‘‘লাল’’ শব্দটি আঞ্চলিক ভাষায় রাঙ্গা নামে পরিচিত। এ থেকে রাঙ্গাবালি নামের উৎপত্তি।

ইতিহাসবিদদের মতে, ১৭৮৪ সালে কতিপয় রাখাইন জনগোষ্ঠী আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। তখন থেকে এতদঞ্চলে জনবসতি শুরু হয়। উপজেলার উৎপত্তি: ৭ জুন ২০১১ তারিখে নিকারের (ন্যাশনাল ইপপ্লিমেন্টেশন কমিটি ফর এ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিফর্ম ) ১০৫তম সভায় রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রশাসনিক অনুমোদন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জুন ২০১১ তারিখে বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশিত হয়।

রাঙ্গাবালীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান:

সোনার চর দ্বীপ ও সমুদ্র সৈকত: পটুয়াখালীর সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে জেগে আছে সোনার চর। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব এবং পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্বে বুড়াগৌরাঙ্গ নদের মোহনায় বঙ্গোপসাগরে সোনার চর দ্বীপটির অবস্থান। সোনার চর পূর্ব-পশ্চিমে ৪ কিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে আড়াই কিলোমিটার। মোট আয়তন ১০ বর্গকিলোমিটার। গোটা দ্বীপটি যেন সাজানো-গোছানো এক বনভূমি। রয়েছে কেওড়া, সুন্দরী, গড়ান, হেঁতাল, গোলপাতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। নিভৃত সোনার চরে শুধু নানান ধরনের বৃক্ষের সমাহারই নয়, রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীও। হরিণ, শিয়াল, মহিষ, বন্য শুয়োর, বানর এ বনের বাসিন্দা। সেসঙ্গে রয়েছে চার কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত। নগরের কর্মচাঞ্চল্য থেকে বহুদূরে এই সৈকতের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছে অজানা। একই স্থানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় যা বিশ্বে বিরল। এ অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ বন মৌ চাষীদের মধু আহরণের অভয়ারণ্য।

লাল

চর হেয়ার দ্বীপ ও সমুদ্র সৈকত: সোনার চর সংলগ্ন মাত্র ০২ কিঃ মিঃ পশ্চিমে রয়েছে চর হেয়ার সমুদ্র সৈকত ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল। প্রায় ৪.৬ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপের ০৩ কিঃ মিঃ দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকত একেবারেই দক্ষিনের বঙ্গোপসাগর মুখি। ছোট বড় অসংখ্য লাল কাকড়ার অভয়ারণ্যের এই দ্বীপের অন্যতম বিশেষ দিক হলো একই স্থানে দাড়িয়ে সুর্যাস্ত ও সুর্যোদয় দেখা যায়।

জাহাজমারা সমুদ্র সৈকত: উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে জাহাজমারা সৈকত। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি সবুজ বন। জাহাজমারা সৈকতে সারি সারি ঝাউবন আর পাখ-পাখালির কলরবে মুখরিত পরিবেশ। চিকচিকে বালুতে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি আর সাদা ঝিনুকের সমারোহ। দেখা মিলবে পাতি তিসাবাজ, সাদা কলার্ড মাছরাঙা, পানকৌড়ি, সাদা বক, খেকশিয়ালসহ নানা ধরনের পাখ-পাখালি আর বন্যপ্রাণী।

লাল

দ্বীপ তুফানিয়া: জাহাজ মারা সমুদ্র সৈকতের সামান্য দক্ষিণেই রয়েছে চর তুফানিয়া দ্বীপ। চারদিকে নদী ও সাগর আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ বনাঞ্চলে সৃষ্ট এই দ্বীপ। প্রায় চার কিলোমিটার সমুদ্রতট ঘিরে রয়েছে বিশাল ঝাউবাগান। সেখানেও প্রায় ১ কিঃ মিঃ দীর্ঘ সৈকত। দেখা মিলবে পাতি তিসাবাজ, সাদা কলার্ড মাছরাঙা, পানকৌড়ি, সাদা বক, খেকশিয়ালসহ নানা ধরনের পাখ-পাখালি আর বন্যপ্রাণী। সাগর ও নদীর তীরে অবস্থিত সহজ সরল মানুষ এর বসবাস যারা আপ্যায়ন ও আন্তরিক। রাঙাবালী সদরে স্বল্প খরচে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা।

যাতায়াত ব্যবস্থা: ঢাকা থেকে আসার জন্য আছে দোতলা লঞ্চ। যা প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট থেকে ছাড়বে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে। আর আছে সরাসরি গাড়ি, যা গলাচিপার হরিদেবপুর পর্যন্ত আসবে। তারপরে লঞ্চে করে রাঙ্গাবালী আসতে হবে অথবা আসা যাবে মোটরসাইকেলে। সরাসরি গাড়ি যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়ক পথ না থাকায়, আমাদের রাঙ্গাবালী উপজেলা পিছিয়ে আছে। আছে নৌপথে আমাদের সর্বশেষ অবলম্বন।

লাল

পর্যটকরা বলছে, সরাসরি গাড়ি যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়ক পথ না থাকায়, আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক ভোগান্তির পরে আসতে পেরেছি। এত সুন্দর জায়গা গুলো দর্শনীয় স্থানগুলো মনোরম পরিবেশ। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত হলে এই স্থানগুলো আরো উন্নত এবং দর্শনীয় স্থান হিসেবে বেশি পরিচিতি লাভ করবে। আর্থিকভাবে সচ্ছলতা হবে। স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়বে।

রাঙ্গাবালি স্থানীয় মানুষের দাবি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত করার জন্য একমাত্র আগুন মূখা নদী তে ফেরি চলাচল করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা বঞ্চিত হয়েছি চিকিৎসা ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে। তাই আমাদের সকলেরই দাবী যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য। তাহলে আমরা ফিরে পাবো আমাদের উন্নত জীবনের একমাত্র ভরসা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button