বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সাবেক সহকারী পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) মো. আবুল হাশেম (৬১) এবং তার স্ত্রী তাহেরিনা বেগমের (৫১) বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২-এর সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ বাদী হয়ে একই কার্যালয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
এর মধ্যে একটি মামলায় চট্টগ্রাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সাবেক সহকারী পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) মো. আবুল হাশেমকে একমাত্র আসামি করা হয়। অপর মামলায় তাহেরিনা বেগমকে প্রধান করে এবং তার স্বামী চট্টগ্রাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সাবেক সহকারী পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) মো. আবুল হাশেমকে দুই নম্বর আসামি করে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। আবুল হাশেম চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার দেওয়ানপুর গশ্চি গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে থাকেন খুলশী থানাধীন ৩৮ নম্বর রূপসী হাউজিংয়ে।
মামলা করার বিষয়টি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এর উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত নিশ্চিত করেন।
চট্টগ্রাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সাবেক সহকারী পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) মো. আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় দাখিলকৃত সম্পদবিবরণীতে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করা এবং আয় বহির্ভূতভাবে ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ভোগ-দখলের অভিযোগে করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. আবুল হাশেম ১৯৮৮ সালে এসআই পদে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। তিনি ২০২২ সালের অক্টোবরে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। আবুল হাশেম ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনে সম্পদবিবরণী দাখিল করেন। তাতে এক কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৬১২ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং নিজ নামে মোট ৯ লাখ ৮৩ হাজার ২৫৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। দুদকের অনুসন্ধানে আবুল হাশেমের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তার বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়।
এদিকে, তাহেরিনা বেগম ও তার স্বামী মো. আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা অপর মামলার এজাহারে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করা এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৪৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৬ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তাতে বলা হয়, তাহেরিনা বেগম ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম-১ কার্যালয়ে তার সম্পদবিবরণী দাখিল করেন। বিবরণীতে তাহেরিনা বেগম ৯৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর এবং ২৩ লাখ ৬ হাজার ৩৪৬ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন।
সম্পদবিবরণী দাখিল পর্যন্ত তাহেরিনা বেগম বাড়িভাড়া, ভাইদের থেকে উপহার বাবদ নগদ অর্থ, ব্যাংক সুদ, টিউশনি ও অন্যান্য আয় বাবদ গ্রহণযোগ্য সর্বমোট আয় ৬০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬৮ টাকা। তিনি ২০০২-২০০৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সান মেরন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ২০০৫-০৬ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষ পর্যন্ত বুটিক্স ব্যবসার আয় বাবদ মোট ২২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ট্যাক্স ফাইলে প্রদর্শন করেন। কিন্তু বুটিক্স ব্যবসা সংক্রান্ত লাইসেন্স বা কোনও রেকর্ডপত্রাদি তিনি দুদকে সরবরাহ করতে পারেননি। তার নামে কোনও বুটিক্স ব্যবসা ছিল না বলে দুদকের প্রতীয়মান হওয়ায় ওই ব্যবসা সংক্রান্ত আয় গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়নি।
এজাহারে আরও বলা হয়, পাঁচলাইশ থানাধীন রুপসী হাউজিং পলিটেকনিক্যাল কলেজ রোডে তার ঘোষণা অনুযায়ী, ২০১৩-১৫ সালের মধ্যে যে চারতলা ভবন তার এবং তার স্বামীর যৌথ নামে নির্মাণ করা হয়েছে, তখন তাতে বিনিয়োগ করার মতো তাহেরিনা বেগমের যথেষ্ট বৈধ আয়ের উৎস ছিল না। এমনকি তার নামে যে মোট এক কোটি ৩ লাখ ৯১ হাজার ১২৪ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য রেকর্ডপত্র মূলে দূদক পেয়েছে তা অর্জনে তখন তার যথেষ্ট বৈধ আয়ের কোনও উৎস ছিল না। তার স্বামী মো. আবুল হাশেম পুলিশের চাকরিরত অবস্থায় যে অসাধু উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছেন সে অর্থের সহযোগিতায় বা তা ব্যবহার করেই তাহেরিনা বেগম তার ও তার স্বামীর যৌথ নামে নির্মিত চার তলা ভবনটি।
দুদক বলছে, মো. আবুল হাশেম পুলিশের চাকরিরত অবস্থায় তার অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ দ্বারা পারস্পরিক যোগসাজশে তার স্ত্রী তাহেরিনা বেগমের নামে সম্পদ অর্জন এবং ওই সম্পদ স্ত্রীর ভোগ-দখলে রাখতে সহযোগিতা করেছেন।
