বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম:
বান্দরবানের লামা বন বিভাগের তৈন রেঞ্জের দুই বন কর্মকর্তাসহ তিন জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বন বিভাগের সৃজিত বাগানের গাছ বিক্রিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বরখাস্ত করা হয় বলে জানান লামা বন বিভাগ।
বরখাস্ত হওয়া দুই বনকর্মকর্তা হলেন, তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্টার খান জুলফিকার আলী, বিট কর্মকর্তা ফরেস্টার মোজাম্মেল হক ও বাগান মালি অলক কুমার সেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানাযায়, লামা বন বিভাগের মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেঁষা কাঁকড়া ঝিরি এলাকার খাস ভূমিতে ১৯৮৬-৮৭ অর্থ বছরে সেগুনসহ অন্যান্য প্রজাতির বনজ গাছের বাগান সৃজন করা হয়। পরে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে ওই এলাকার ফাঁকা স্থানে একই প্রজাতির বনজ গাছের বাগান সৃজন করে বন বিভাগ। ১০ বছরের ব্যবধানে সৃজিত বাগানের মধ্যে প্রথম ধাপে ৬০০ একর ও পরবর্তী ধাপে ৪৫০ একর খাস ভূমিতে বাগান সৃজন করা হয়। যা লামা বন বিভাগের তৈন রেঞ্জের আওতাভুক্ত।
চলতি বছরের গত এপ্রিলে কাঁকড়াঝিরি এলাকার দুই ও তিন যুগের বেশি বয়সী সেগুনসহ অন্যান্য প্রজাতির মূল্যবান গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ এপ্রিল লামার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আরিফুল হক বেলাল ওই এলাকায় তদন্তে যান। ঘটনার সত্যতা পেয়ে ওই দিনই বাগান মালি অলক কুমার সেনকে ক্লোজড করা হয়। একই সঙ্গে সিনিয়র বন কর্মকর্তা হাবিব উল্লাহকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়। কেটে নেয়া গাছগুলো থেকে গড়ে ১০ ঘনফুটের বেশি কাঠ ধরা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, গত মার্চের মাঝামাঝিতে কাঁকড়াঝিরি এলাকায় বন বিভাগের সৃজিত বাগানের গাছ কাটা শুরু হয়। এসব কাটাগাছ পাচার করতে এক্সক্যাভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে চোরাই রাস্তা তৈরি করা হয়। সেসময় খবরটি তৈন রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা ও বাগান মালিকে জানিয়েছিল স্থানীয়রা। কিন্তু তারা সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণে চোরাই রাস্তা ব্যবহার করে কাটা গাছের কাঠগুলো লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বনপুর ও কাঠালছড়া হয়ে চকরিয়ার মালুমঘাটের দিকে নিয়ে গেছে চোরাকারবারির।
এ বিষয়ে তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা খান জুলফিকার আলী জানান, গাছ কাটা ও পাচারের বিষয়ে বিট কর্মকর্তা কিংবা বাগান মালি তাকে অবগত করেনি। এছাড়া, সাময়িক বরখাস্ত সংক্রান্ত কোনো নোটিশ পাননি বলেও জানান তিনি।
এদিকে, গাছ বিক্রির ঘটনা ও সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরিফুল হক বেলাল। তিনি বলেন, ৪ ও ৬ ধারায় ঘোষিত খাস ভূমিতে বন বিভাগের সৃজিত বাগানের সেগুনসহ অন্যান্য মূল্যবান বিভিন্ন প্রজাতির ১৮৭টি গাছ কাটা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। এ ঘটনায় চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত দুই-তৃতীয়াংশ কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ছয়টি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া গাছ বিক্রির ঘটনায় জড়িতের অভিযোগে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। কেটে নেয়া গাছগুলোর কাঠ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিন।
