যুব বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো বিশ্বসেরা জয় বাংলাদেশের
শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ঐতিহাসিক জয় এনে দিল বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে শিরোপার স্বাদ পেলো বাংলাদেশ।
কোয়ার্টারে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা, সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। এবার আরেকটি ইতিহাস গড়লো যুবা টাইগাররা দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান যুব ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে বৃষ্টি আইনে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।
উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ৮.৫ ওভারে দলীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ হাসান। কিন্তু এরপর ১৫ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
এরপরই, আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয় (৮), তৌহিদ হৃদয় (০) ও শাহাদাত হোসেন এর বিদায়ে নিরাশ হয়ে উঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেমীরা। ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হয়ে ফিরে যান আরেক ওপেনার ইমন।
৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন দু:সময়ের মুখ দেখছিল, ঠিক তখনই হাল ধরে আকবর। কিন্তু তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি শামীম হোসেন (৭) ও অভিষেক দাস (৫)। পরে পুনরায় ব্যাট হাতে ফিরে আসেন ইমন।
আকবর-ইমনের ৪১ রানের জুটি ভাঙেন জসওয়াল। ৭৯ বলে ৭ চারে ৪৭ রান করে ফিরে যান ইমন। এরপর রাকিবুল হাসানকে নিয়ে খেলা চালিয়ে যেতে থেকে আকবর।
ধীরে ধীরে যখন বাংলাদেশ জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন ৪১তম ওভারে বৃষ্টি নেমে আসে। যুবা টাইগারদের রান তখন ৭ উইকেটে ১৬৩। ৫৪ বলে দরকার তখন মাত্র ১৫ রান। ডার্ক লুইস পদ্ধতিতে তখনও বাংলাদেশ ১৮ রানে এগিয়ে ছিল।
বৃষ্টি শেষে পুনরায় ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ডিএল পদ্ধতিতে তখন যুব টাইগারদের দরকার হয় ৩০ বলে ৭ রান। আকবরের ৭৭ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৪৩ এবং রাকিবুলের ৯ রানের ইনিংসে ভর করে জয়ের মুকুট ছিনিয়ে নেই যুবা টাইগাররা।
এর আগে রোববার (০৯ ফেব্রুয়ারি) পচেফস্ট্রমের সেনওয়েজ পার্কের ফাইনালে টসে জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। তানজিম হাসান সাকিব আর শরিফুল ইসলাম মিলে প্রথম ৬ ওভারে খরচ করেছেন মাত্র ৮ রান। এরপর ৭ম ওভারে এসেই মেডেন ওভারের পাশাপাশি ১ উইকেট তুলে নেন অভিষেক।
তবে প্রথম উইকেট হারানোর পর থেকেই উইকেট ধরে রাখায় মনোযোগ বাড়ায় ভারত। দুই ব্যাটসম্যান যশস্বী জসওয়াল ও তিলক ভার্মা মিলে উইকেট ধরে রাখেন।
২৫ ওভারের পর থেকে রান তোলার দিকে ঝুঁকতে শুরু করে ভারত। তবে সাকিবের বলে তিলকের বিদায়ে কিছুটা চাপের মুখে পরে দলটি। ৩৮ রান করে বিদায় নেয় তিলক।
এরপর দলীয় ১১৪ রানে প্রিয়মকে (৭) হারায় ভারত। ভারতের যুব অধিনায়ককে বন্দি হতে হয় রাকিবুল হাসান কাছে। কিন্তু লড়াই করতে থাকেন জসওয়াল। সেঞ্চুরি থেকে ১২ রান দূরে থাকতে শরীফুলের বলে তানজিদের হাতে আউট হন তিনি।
জসওয়ালকে বিদায়ে দেওয়ার বলেই সিদ্ধেশ ভীরকে শূন্যহাতে ফিরে যেতে হয়। এরপর রানআউটের শিকার হয়ে বিদায় নেন উইকেটরক্ষক ধ্রুব জুরেল (২২)। রান আউট হন রবিও (২)। এরপর অভিষেক এসে বোল্ড করেন অথর্বকে (৩)। কার্তিক তিয়াগিকে ডাক উপহার দিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন অভিষেক। এরপর শেষ উইকেট হিসেবে আউট হোন সুশান্ত মিশ্র (৩)। ১ রানে অপরাজিত ছিলেন আকাশ সিং।
যেকোনো ধরণের ক্রিকেটে এবারই প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো টাইগাররা।এই ভারতের বিপক্ষেই সর্বশেষ এশিয়া কাপের ফাইনালে ৫ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় দলও এশিয়া কাপের ফাইনাল ও নিদাহাস ট্রফিতে জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েও হেরে যায় ভারতের বিপক্ষে। তবে এবার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ঠিকই ভারতকে বড় মঞ্চে হার উপহার দিল বাংলাদেশ। আর দেশের জন্য এনে দিল বিশাল বড় জয়।