আন্তর্জাতিক

সুদানে বোমাবর্ষন বন্ধ না হলে শান্তি সংলাপে যাবে না আরএসএফ

সুদানের সামরিক বাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে সংঘাত চলছে। এ সঘাত থামাতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিবাদমান দু’পক্ষকে বার-বার যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা দিয়ে শান্তি সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে।
এর মধ্যে আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান হেমেদি দাগালো বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বোমাবর্ষণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো আলোচনায় যাবেন না। তিনি অভিযোগ করেন, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও আরএসএফ যোদ্ধাদের ওপর নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে।
হামদান হেমেদি দাগালো চলমান এই পরিস্থিতির জন্য দেশটির সামরিক বাহিনী এবং সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহানকে দায়ী করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী ‘নিষ্ঠুরতা’ বন্ধ করলেই কেবল শান্তি সংলাপ শুরু করা সম্ভব।
সুদানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ এপ্রিল সামরিক বাহিনী-আরএসএফ সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সুদানে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫১২ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ১৯৩ জন। তবে ধারণা করা হচ্ছে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা মন্ত্রণালয়ের হিসেবের চাইতে অনেক বেশি হবে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘসহ সুদানের প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় এ পর্যন্ত ৩ বার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে সামরিক বাহিনী এবং আরএসএফ।
কিন্তু বিবিসিকে সাক্ষাৎকারে জেনারেল হেমেদি জানান, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও আরএসএফ যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বোমা ও গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির, যিনি প্রায় ৩ দশক সুদানের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছিলেন। দেশটির সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ঘটে এই অভ্যুত্থান। অভ্যুত্থানের মূল নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান এবং জেনারেল হেমেদি উভয়েই।
বশিরকে উৎখাতের পর ‘সভরিন কাউন্সিল (সার্বভৌম পরিষদ) নামের একটি পরিষদ দেশটি পরিচালনা করে আসছে। সেই পরিষদের প্রেসিডেন্ট সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল বুরহান এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট আরএসএফের শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল হেমেদি।
জেনারেল হেমেদি বলেন, জেনারেল বুরহানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা নেই। তবে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের ঘনিষ্টদের সঙ্গে জেনারেল বুরহানের ব্যাপক ঘনিষ্টতা এবং তাদেরকে সরকারে অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টার কারণে বুরহানকে এখন বিশ্বাসঘাতক মনে করছেন তিনি।
রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সুদানের ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে প্রশ্রয় দিতেন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির। তার শাসনামলের ৩০ বছর কঠোর ইসলামি শাসন ও শরিয়া আইন জারি ছিল সুদানে।
হেমেদি অভিযোগ করে বলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল বুরহানও ওমর আল বশিরের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন।
‘দুর্ভাগ্যবশত, বুরহানকে চালাচ্ছে কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীগুলো। তিনি তাদের স্বার্থকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন,’ জেনারেল হেমেদি বলেন।
হেমেদি বলেন, ‘আমি বেসামরিক সরকারের অপেক্ষায় আছি, যেটি একটি সম্পূর্ণ বেসামরিক সরকার হবে। আমার নীতি এটাই।’
যুদ্ধরত সেনাসদস্যদের উদ্দেশে জেনারেল হেমেদি বলেন, ‘আরএসএফ সদস্যরা সেনাবাহিনীর শত্রু ছিল না। সংকটকালে দেশকে রক্ষায় সেনাবাহিনী ও আরএসএফ কাঁধে কাঁধ লিয়ে লড়াই করেছে।’
সেনাসদস্যদের হেমেদি বলেন, ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব না। দয়া করে আপনারা নিজ নিজ ডিভিশনে চলে যান, আমরা আপনাদের সঙ্গে লড়াই করব না।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button