রাজনীতি

বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ড. ইউনূসের ইস্যুতে আশ্রয় নিয়েছে : তথ্যমন্ত্রী

বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ড. মোহাম্মদ ইউনূস সাহেবের ইস্যুতে আশ্রয় নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, এভাবে আশ্রয় নিয়ে যারা খুনের, মানুষ পোড়ানো, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করেন, যাদের জন্মটাই খুন ও রক্তের উপর দাঁড়িয়ে, তাদের দ্বারা দেশ ও জাতির কখনো উন্নয়ন অগ্রগতি হয় না।
বুধবার (৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বেদনাতুর ১৯৭৫ আগস্টের শহিদদের আলেখ্য’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বইটি লিখেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ড. জেবউননেছা।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব নাকি বলেছেন, তাদের (বিএনপি) আন্দোলন ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য ড. মোহাম্মদ ইউনূস সাহেবের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে। আমি ড. ইউনূসের প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, নোবেল পুরস্কার পেলেই কি কেউ আইনের ঊর্ধ্বে? দেশের রাষ্ট্রপতি হলে কি কেউ আইনের ঊর্ধ্বে? হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তাকেও কয়েক বছর জেলখানায় কাটাতে হয়েছে৷ এ দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া। তিনিও শাস্তি ভোগ করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকেও কিছুদিনের জন্য জেলখানায় যেতে হয়েছে। তাহলে নোবেল পুরস্কার পেলেই কি তার শ্রমিকের পাওনা মওকুফ।
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা এখন বড় বড় কথা বলে। রাত-বিরাতে বিদেশিদের কাছে ধর্না দেয়। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। কেউ তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার সমর্থন করেনি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাঁক্রো আসছেন, আবার রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছুটে আসছেন আগামীকাল। এতেই প্রমাণিত হয়, বিশ্ব সম্প্রদায় আমাদের সঙ্গে আছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্দেশে নয়, বরং বাংলাদেশ, জাতি, রাষ্ট্রকে হত্যার উদ্দেশে ঘটানো হয়েছিল। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড মানব ইতিহাসের জঘন্য হত্যাকাণ্ড। কারণ এই হত্যাকাণ্ডে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুকেও রেহাই দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করতেন, তাহলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থানের পর আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। বঙ্গবন্ধুর নানা কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে দেশভাগের পর তিনি পূর্ববাংলাকে স্বাধীন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু যুক্ত ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার এক বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছিলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে বাঙালিদের মুক্তি নিহিত নেই৷ তিনি একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তর করলেন। মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে তিনি রাজনীতি করেছেন। তার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রধান দুই কুশীলব খন্দকার মোস্তাক ও জিয়াউর রহমান। এই দায় তারা কখনো এড়াতে পারবে না। এই জাতির দুর্ভাগ্য, যাদের হাতে রক্ত, যারা খুনের উপর দাঁড়িয়ে, রক্তের উপর দাঁড়িয়ে দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে এবং সেই রাজনৈতিক দল আবার ভোট পায়।
ব্যতিক্রমধর্মী ও গবেষণালব্ধ গ্রন্থ রচনা করার জন্য অধ্যাপক জেবউননেছাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের উপর অনেক বই রচিত হয়েছে। কিন্তু অনেক বইয়ের মান সঠিক থাকে না। সেখানে জেবউনেছার বইটি ব্যতিক্রম। কারণ ১৫ আগস্টে নিহতদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে জেনে দীর্ঘদিন ধরে খোঁজ-খবর করে বইয়ের মধ্যে নিয়ে আসার কাজটি সম্ভবত আগে কেউ ভালোভাবে করেনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এমন একটি পরিশ্রমলব্ধ গ্রন্থ লেখার জন্য জেবউননেছাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি জাতির পক্ষ থেকে এটি করেছেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমরা সেদিন বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। ছোট্ট রাসেলকেও সেদিন ঘাতকরা বাঁচতে দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মজিজ্ঞাসা, আত্মপ্রশ্ন আমাদের অর্জন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হয়েছে, কিন্তু এর পেছনের কুশীলবদের বিচার করা হয়নি। কারা এর পেছনে ছিল, সেটা সবাইকে জানাতে হবে। এজন্য আমাদের আত্মজিজ্ঞাসা, আত্মপ্রশ্ন করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button