অন্যান্য খবর

ড. ইউনূসের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি সেনাপ্রধানের

দেশের প্রধান প্রধান সংস্কার সম্পূর্ণ করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় তার কার্যালয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক বিরল সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন তিনি।
রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার একটি রূপরেখার কথা জানান সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, আমি তার পাশে থাকবো। যাই হোক না কেন। যাতে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।
সেনাপ্রধান বলেন, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্রে উত্তরণ করা উচিত। তবে এমন সময়সীমার কথা বলার পরপরই ধৈর্য ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও সেনাপ্রধান জেনারেল জামানের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক হয়। তাদের দুজনের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সহিংসতা ও অশান্তির পর দেশকে স্থিতিশীল করার সরকারি প্রচেষ্টায় সহায়তা করছে সেনাবাহিনী। জেনারেল জামান বলেন, আমি নিশ্চিত যে আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি তাহলে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।
গত জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে রাজপথে নেমে আসে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনের নামে পুলিশ দমন-পীড়ন চালালে আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ যোগ দিলে কোটা সংস্কার আন্দোলন রূপ নেয় সরকারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারের আন্দালেনে সর্বোচ্চ এক হাজারে বেশি মানুষ শহিদ হন।
তবে গণঅভ্যুত্থানের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকার জমজমাট রাস্তায় এখন শান্তি ফিরেছে। কিন্তু হাসিনা সরকারের নাটকীয় পতনের পর বেসরকারি প্রশাসনের কিছু অংশ এখনো সঠিকভাবে কার্যকর হয়নি। প্রায় দুই লাখ সদস্যের পুলিশ এখনো বিশৃঙ্খল অবস্থায়। তাই দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে সেনাবাহিনী।
সেনাপ্রধান জানান, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশ ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসব সরকারি সংস্কারের সঙ্গে মিল রেখে সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে অন্যায়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু সেনাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যদি কোনো কর্মরত সেনা সদস্য দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে অবশ্যই আমি ব্যবস্থা নেব। কিছু সামরিক কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রিত সংস্থায় কাজ করার সময় পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করে থাকতে পারেন।
তবে দীর্ঘ মেয়াদে জেনারেল জামান সেনাবাহিনী থেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে দূরে রাখতে চান। তিনি বলেন, এটি কেবল তখনই ঘটতে পারে যখন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকে। সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। এই মন্ত্রণালয় সাধারণত প্রধানমন্ত্রীই নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই অন্তর্বর্তী সরকার একটি সাংবিধানিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ব্যবস্থা সংশোধনের দিকে নজর দিতে পারে বলে মনে করেন সেনাপ্রধান।
 তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। একজন সৈনিকের রাজনীতিতে জড়িত হওয়া উচিত নয়।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button