আজ বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস
আজ ২০ মে, বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস। আজ বিশ্ব মেট্রোলজি (পরিমাপ) দিবস। পণ্যের সঠিক ওজন ও পরিমাপের গুরুত্ব এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি বছর ২০ মে বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালন করা হয়। এ বছরের বিশ্ব মেট্রোলজি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘Metrology in the Digital Era’। অর্থাৎ এর ভাবানুবাদ ‘ডিজিটাল যুগে পরিমাপ’। আজ নিউজ নাউ বাংলার বিশেষ আয়োজনে থাকছে ‘‘বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস’’ এর কিছু প্রাচীন তথ্য।
বিশ্ব মেট্রোলজি দিবসের উৎস :
১৮৭৫ সালের ২০ মে সতেরটি জাতির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত মিটার কনভেনশন চুক্তির দিবসটি স্মরনীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর বার্ষিক কর্মসূচী হিসেবে ২০ মে বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস উদযাপন করা হয়। এ চুক্তিটি পরিমাপ বিজ্ঞানের এবং এর শিল্প, বাণিজ্যিক এবং সামাজিক প্রয়োগগুলোতে বৈশ্বিক সহযোগিতার একটি অভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করে। “মেট্রিক কনভেনশন” বৈশ্বিকভাবে ধারাবাহিক পরিমাপ ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছিল, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং উদ্ভাবন, শিল্প উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সমর্থন করে, পাশাপাশি মানুষের জীবন-জীবিকা ও বৈশ্বিক পরিবেশ সুরক্ষাকে সমর্থন করে। মিটার কনভেনশনের আসল লক্ষ্য-বিশ্বব্যাপী অভিন্ন পরিমাপ ব্যবস্থার প্রবর্তন যা- ১৮৭৫ সালের মতই আজও সমান গুরুত্ব বহন করে চলেছে।
প্রাচীন পরিমাপবিদ্যার কিছু তথ্য :
দিন যতই যাচ্ছে, বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কার ততই উন্নত হচ্ছে। কিন্তু আজকের এই দিনে আসতে অনেক মেধা ও শ্রম ব্যয় করতে হয়েছে মানুষের।মেট্রোলজি অর্থ পরিমাপবিদ্যা। অর্থাৎ মাপ-জোকের জ্ঞানই হলো মেট্রোলজি। এসআই এককের পরিমাপককে পরিবর্তন নয় বরং বিবর্তন করার দিকে লক্ষ্য রেখেই আন্তর্জাতিক মেট্রোলজি দিবসের আয়োজন। সেই সাথে পরিমাপের ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করাও অন্যতম উদ্দেশ্য। পরিমাপ এখন আর শুধু চাল-ডাল, আলু-পেঁয়াজে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়েছে বিশ্ব থেকে মহাবিশ্বে।
তাই হিসেব-নিকেষের খাতায় পদার্থ বিজ্ঞান ও কোয়ান্টাম যুক্ত হতে যাচ্ছে। সেই সাথে আসবে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন। তবে, হঠকারীভাবে এ পরিবর্তন করা হচ্ছে না। নেপথ্যে আছে বড় কলেবরের গবেষণা।
প্রাচীন সময়ের কিছু পরিমাপবিদ্যার কিছু তথ্য নিম্নে দেয়া হলো।
শারীরিক রেফারেন্সের প্রাচীন মেট্রোলজি
ইয়িন ধ্বংসাবশেষে পাওয়া তিনটি হাড়ের শাসকের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ সেন্টিমিটার, যা মাঝারি উচ্চতার কোনও ব্যক্তির তর্জনীর ডগা পর্যন্ত অঙ্গুলের ডগা থেকে ঠিক দৈর্ঘ্য, যা “বুশো” এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রাচীনরা জানতেন যে মানব দেহের দৈর্ঘ্যের প্রমিত ত্রুটি হিসাবে ব্যবহার করা খুব বড় ছিল, তাই তারা একটি পায়ের দৈর্ঘ্য নির্ধারণের জন্য আরও ভাল একটি প্রাকৃতিক বস্তুর সন্ধান করেছেন।
“হুয়ানানজি · তেনউইন প্রশিক্ষণ” বলেছেন: “বারোটি চেস্টনট এক ইঞ্চির সমান” “” শুওয়েন “: দশটি শট একটি ভ্রমণের জন্য এবং দশটি যাত্রা পয়েন্টের জন্য। “সান তজু সুয়ান জিং”: “রেশমকৃমি রেশমটি একটি মুহূর্ত, দশ মুহুর্ত সেকেন্ড, দশ সেকেন্ডটি মিলি সেকেন্ড, দশ মিলি সেকেন্ডে দশ সেন্টিমিটার এবং মিনিট দশ মিনিট”।
প্রাচীন বছরের উৎস
তাপ এবং শীত প্রাকৃতিক ঘটনা যা অনুভব করা সহজ। সংজ্ঞাবহ অঙ্গগুলির মাধ্যমে asonsতুগুলির পরিবর্তনগুলি বিচার করা থেকে, পূর্ণ চাঁদ থেকে যে ৩০ দিন ও রাত অতিবাহিত হয়েছিল তা রেকর্ড করার জন্য সংখ্যাগুলি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা শিখতে এবং তারপরে সূর্য ও নক্ষত্রগুলির গতিবিধি সম্পর্কিত আইনগুলি আবিষ্কার করে ধীরে ধীরে জ্যোতির্বিদ্যার ক্যালেন্ডারের প্রাথমিক জ্ঞান গঠন করে। এই জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত ঘটনাটি সূর্য, চাঁদ, পর্বত, সূর্যোদয়, সূর্য এবং সূর্য থেকে উদ্ভূত আদিম সামাজিক মৃৎশিল্পের খণ্ডগুলির উপর আঁকা এবং তারার আকাশের পটভূমিতে সূর্যের অভিন্ন পথকে সমানভাবে ১২ অংশে বিভক্ত করে শিখতে পারে। ।
ইউয়ান রাজবংশের ওজন ও পরিমাপ :
ইউয়ান রাজবংশ একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল ছিল । চীনের গনপাউডার, কম্পাস এবং মুদ্রণের তিনটি বড় আবিষ্কার এই সময়ে আরব হয়ে পশ্চিম ইউরোপে প্রবর্তিত হয়েছিল। সমস্ত দল ও অঞ্চলগুলির সাথে বাণিজ্য ও ব্যবসায়ের সুবিধার্থে সরকার বিভিন্ন আকারের আঁকিতে বিভিন্ন চরিত্রের খোদাই সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: চীনা অক্ষর, উইঘুর মঙ্গোলিয়ান, বাথ এবং পার্সিয়ান। বিভিন্ন জাতীয়তা এবং বিভিন্ন দেশের চরিত্রগুলি একই সাথে ছোট আকারের স্কেলে উপস্থিত হয়।মঙ্গোলিয়ান, হান এবং তিব্বতীয় নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি আদান-প্রদানকে জোরদার করার পাশাপাশি, চীনে ব্যবসা করার জন্য বিদেশীদের প্রয়োজনীয়তাও মেটানো হয়।
ইউয়ান রাজবংশের প্রতিষ্ঠার পরে, গান রাজবংশের মূল শাসন ব্যবস্থাটি মূলত ব্যবহৃত হয়েছিল। সং রাজবংশে, ওজন ও পদক্ষেপগুলি তাইফু মন্দিরের দায়িত্বে ছিল, যা ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য রাজ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল এবং বেসরকারী খাত কর্তৃক ব্যক্তিগত তৈরি নিষিদ্ধ ছিল।
ওজন ও পরিমাপ বিষয়ক দুটি আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংস্থা BIPM (International Bureau of Weights & Measures) এবং OIML (International Organization of Legal Metrology) যৌথভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় মেট্রোলজি সংস্থার অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস পালন করে থাকে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও “বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট” কর্তৃক প্রতি বছরের ২০ মে ‘বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস’ যথাযথ মর্যাদায় নিয়মিতভাবে পালন করা হয়ে থাকে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এবং শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে ওজন ও পরিমাপ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা International Bureau of Weights and Measures (BIPM) এবং International Bureau of Legal Metrology (BIML) এর প্রধানরা বাণী দিয়েছেন।
বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস উপলক্ষে জাতীয় মান সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিএসটিআইর প্রধান কার্যালসহ বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়সমূহে দিবসটির তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা সভা এবং প্রচার-প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিশেষ সাক্ষাৎকারভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান এবং বাংলাদেশ বেতারে আলোচনা অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থা হয়েছে।
মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠানোর ব্যবস্থা ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড লাগানো হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রোববার (২২ মে) তেজগাঁওয়ে বিএসটিআইর প্রধান কার্যালয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে শিল্পমন্ত্রী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী, শিল্পসচিব ও এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করবেন বিএসটিআই মহাপরিচালক ড. মো. নজরুল আনোয়ার।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রকার পণ্য বা সেবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে বা বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে লেনদেন বা কেনাবেচা করা হচ্ছে। এটা সম্ভব হচ্ছে একমাত্র পরিমাপের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পদ্ধতির প্রচলন এবং এ পদ্ধতির প্রতি মানুষের আস্থা, নির্ভরযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে।
বিআইপিএম ও বিআইএমএলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে লিগ্যাল ও সায়েন্টিফিক মেট্রোলজির প্রচলন এবং বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র রেগুলেটরি সংস্থা হিসেবে বিএসটিআই এ বিষয়ে কাজ করছে। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাপের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলাই বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য।