ফিচারলিড স্টোরিশুক্রবারের বিশেষ
শহরে শরতের আবহ
খুব সকালে বাইরে বের হলেই ঝরে পড়া শিউলি ফুল আর মাটির সোঁদা গন্ধই মনে করিয়ে দেয় শরতের কথা। সেই শরতের আবহ এখন বাঙালির প্রকৃতিতে।
শরৎ আর নতুন অতিথি হয়ে নেই। প্রিয় ঋতুকে সেই প্রথম দিন ১ ভাদ্র স্বাগত জানিয়েছিল বাঙালী । তাই বনে-মনে সমানভাবে দৃশ্যমান। এখন বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কাশফুলের দোলা আর নীল আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা।
বাংলা ঋতু অনুসারে ভাদ্র-আশ্বিন মাস জুড়ে শরৎকালের রাজত্ব। বর্ষার বিদায়ে প্রকৃতি এ সময় ঋতুপরিক্রমায় এখন ফুটে শরতের সিগ্ধ ও প্রশান্ত রূপ। প্রতিটি ভোর আসে ঝরে পড়া শিউলির সৌন্দর্য গায়ে মেখে। পৃথিবীর বুকে এক অনাবিল আনন্দের ঝর্ণাধারা ছড়িয়ে দেয় এই ঋতু।
রাজধানীতে শরত উৎসব:
প্রতিবছর রাজধানীতে শরত উৎসব পালন করে থাকে সত্যেন শিল্পীগোষ্ঠী। আয়োজনের কারণ ব্যাখ্যা করে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মানজারুল চৌধুরী সুইট বলেন, “ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলোর মাধ্যমে তারা চেষ্টা করেন নতুন প্রজন্মকে বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য সম্পর্কে পরিচয় করে দিতে। এ ধরনের ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো মানুষের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দিতে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরতের শুভ্রতার মতোই মানুষের হৃদয়ে শুভ্রতার বাণী পৌঁছে দেয়া যায়। এছাড়া এ ধরনের উৎসব যত বেশি হবে নতুন প্রজন্মকে তত বেশি শেকড়ের সন্ধানে ফিরিয়ে আনা যাবে। কারণ, এই প্রজন্মের অনেকের মাঝেই আমাদের প্রকৃত সংস্কৃতি সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা ও ভালবাসা নেই। এর ফলে তাদের মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি সম্পর্কে মমত্ববোধ সৃষ্টি হবে।”
কিন্তু করোনা মহামারীর কারনে গত দুই বছরে নেই কোনো আয়োজন। তবু প্রকৃতি প্রেমীদের মন ধরে রাখা দায়। দেশে এখন শিথিল রাখা হয়েছে লকডাউন। তাই ঘর বন্দি থাকা মানুষগুলো একটু বিনোদোনের আশায় ছুটে চলেছে প্রকৃতির কাছে।
রাজধানীতে শরতের কাশবন:
গ্রামীণ প্রকৃতিতে শরৎ এসেছে সাড়ম্বরে। কিন্তু ইট-কাঠের এই নগরে শরৎ কোথায়? শহরের ব্যস্ত যান্ত্রিক জীবনে অনেকেই শরতের কাশফুলকে অনুভব করেন। কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে হলে সুদূর গ্রামে যেতে হবে তা নয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানেই এখন রয়েছে কাশফুলের বিস্তৃতি। রাজধানীর দিয়া বাড়ি, বেড়িবাঁধ, পূর্বাচল এলাকাসহ অনেক স্থানেই পাবেন শরতের কাশফুলের ছোওঁয়া।
রুমানা জামান জানান, “ শরতের কাশফুলে আকর্ষিত হয় না, এমন কেউ নেই। কাশফুল নদীতীরে বনের প্রান্তে অপরূপ শোভা ছড়ায়। সাদা কাশফুল, শিউলি, স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, আলোছায়ার খেলা দিনভর এইসব মিলেই তো শরৎ। শরতের স্নিগ্ধতা এক কথায় অসাধারণ! জলহারা শুভ্র মেঘের দল যখন নীল, নির্জন, নির্মল আকাশে পদসঞ্চার করে তখন আমরা বুঝতে পারি শরত এসেছে। তাই প্রতি শরতেই সুযোগ পেলে ছুটে যাই কাশবনে। শরতের আগমন সত্যিই মধুর। ”
সাজিদা পারুল বলেন, “শরত শুভ্রতার ঋতু। আনে স্নিগ্ধতা। শরতের নীল আকাশে মাঝে মাঝে সাদা তুলোর মতো মেঘ উড়ে বেড়ায়। হুটহাট আকাশে ভর করে কালো মেঘ। অভিমানী মেঘ বৃষ্টি হয়েও ঝরে পড়ে। শুধু তাই নয়, শরতে নদীর কূল ঘেঁষে কাশের গুচ্ছ মৃদু মন্দ বাতাসে দোল খায়। কাশফুল শেফালীমালা নবীন ধানের মঞ্জরি এই সময়ে দৃশ্যমান হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ইট কাঠ ক্রংকিটের এই শহরের ব্যস্ততম জীবনে প্রকৃতির সান্নিধ্য মেলা ভার। তবু শরত ও কাশফুল কেনো জানি হৃদয়কে দোলা দেয়। তাই একটু অবসর খুঁজে চেষ্টা করি কাশফুলের সান্নিধ্যে যাওয়ার। ”
অনেকের মতে, শরতকালে মনে নেচে ওঠে উৎসবের নেশা। কারণ, মাঠে মাঠে সবুজ ধানের ওপর সোনালি আলোর ঝলমলানি কৃষকের মনে জাগায় আসন্ন নবান্নের প্রতীক্ষা। আলোক-শিশিরে-কুসুমে-ধান্যে বাংলার প্রকৃতিও হেসে ওঠে। আর বাঙালির সেই প্রাণের উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা তো আছেই। নস্টালজিয়া বাঙালির প্রত্যাশা,শীঘ্রই করোনামুক্ত হবে বিশ্ব। আবারো শরত উৎসবে মেতে উঠবে বাঙালি ।