রাজনীতি

সময় হলে খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন: ফখরুল

খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকার নাটক শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকারের দরদ এত উতলে উঠলো কেন? সরকার দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। খালেদা জিয়ার যখন রাজনীতি করার সময় আসবে তখন করবেন, যেখানেই থাকুক। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগের মাথা না ঘামালেও চলবে।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী তাঁতি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে নাটক করছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সময় এলেই তিনি রাজনীতি করবেন। জেলে থাকুক আর যেখানেই থাকুক, আগ বাড়িয়ে কথা বলবেন না। তার রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন। বেগম খালেদা জিয়া আজ গৃহবন্দি। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ; এ সময় তাকে নিয়ে সরকার নাটক শুরু করেছে।
নির্যাতন করে এ সরকার টিকে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা গত আগস্ট মাস থেকে আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, কামার, কুমার তারা সবাই অনেক কষ্টে আছে। চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আমরা প্রতিদিন দেখতে পাইতেছি ট্রাকের লাইনে মানুষ বাড়তে আছে। ছেলে মেয়েদের প্রোটিন দিতে হয় তার জন্য অন্তত একটি ডিম খেতে দিতে হয় প্রতিদিন। সেই ডিম এখন ছোঁয়া যায় না। ব্রয়লার মুরগিতে কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে।
চিনির দাম বেড়েছে, লবণের দাম বেড়েছে। শহরগুলোতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে। লোকজন এখন গ্রামে চলে যাচ্ছে। ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজে পাঠানো অসম্ভব হয়ে গেছে। ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন বক্তৃতায় বলছেন, ‘এত উন্নয়ন দিচ্ছি তারপরেও এত চিৎকার করে কেন।’ উন্নয়ন করছেন মূলত আপনাদের নিজেদের। উন্নয়ন হচ্ছে আপনাদের যারা আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব দলের পৃষ্ঠপোষকতায় আছে তাদের। তারা ইতোমধ্যে আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন।
বাম দলের লোকজন আওয়ামী লীগের চেয়েও খারাপ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এমন একটা পার্লামেন্ট বানিয়েছে, যে পার্লামেন্টের কখনো নির্বাচনই হয়নি। নির্বাচন ছাড়া একটি পার্লামেন্ট তৈরি করেছে। ফলে প্রশ্ন করার কেউ নেই, নির্বাচন করারও কেউ নেই। আমাদের সিরাজ সাহেবেরা সেই পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করে চলে এসেছেন। কারণ, ওই পার্লামেন্টে তাদের আর কোন দরকার নেই।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালেও তারা একইভাবে নির্বাচন করেছিল। ২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। আমাদের বেশ কিছু লোকজন বিশেষ করে জাতীয় পার্টি ডুগডুগি বাজিয়ে সেখানে যোগদান করল। শুধু জাতীয় পার্টি না আরও আছে। আমাদের অনেক বাম নেতা, এক সময়কার প্রখ্যাত নেতা, যারা অনেক বড় বড় কথা বলেন এখনও। তারাও সেদিন নৌকার সঙ্গে মহাজোট করে সেই নির্বাচনে চলে গিয়েছিলো। মন্ত্রিত্ব না দেওয়ায় ভাগ বাটোয়ারা ঠিকমতো হচ্ছে না। এখন বলছে, ১৪ দল কাজ করে না। আমাদের সঙ্গে কথা রাখা হয় নাই। এরা আওয়ামী লীগের চেয়েও খারাপ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জনগণের অসুখের দিকে তাকান। জনগণের অসুখ একটাই, সে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। জনগণের পার্লামেন্ট নেই। তাই কেউ জনগণের কথা বলতে পারে না। তাই আমাদের সবচেয়ে বড় যে দাবি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।
তত্ত্বাবধায় সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি করা যাবে না। কারণ সংবিধানে নেই। তোমরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দাবি তুলে ছিলে, ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলে তখন কি সংবিধানে ছিল? ছিল না। বেগম খালেদা জিয়া যখন দেখেছেন জনগণ এটা চায়। এটা করলে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হবে। তখন তিনি পার্লামেন্টে বিশেষ অধিবেশন বসিয়ে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাশ করে সংবিধানে সংযোজন করেছে। তারপরে তার অধীনে নির্বাচন হয়েছে। কই তখন তো বিএনপি তত্ত্বাবধায় সরকারে না গিয়ে অন্য কোন উপায়ে কাজ করে নাই। সেদিন তো বিএনপি তার মতো করে নির্বাচন করতে চায়নি। আর আপনারা কথায় কথায় বলেন, বিএনপি ভোট চুরি করে। বিএনপি কোনদিনই ভোট চুরি করেনি। আপনারা ভোট চুরি করেছেন।
তাঁতীদলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাঁতীদের বাঁচিয়ে রাখা এবং তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাঁতীদল তৈরি করেছিলেন। এখন যারা তাঁতীদল করছেন তাদের কাছে আমার আবেদন থাকবে, আপনারা আপনাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করুন। শুধু মূল দলের সাথে রাস্তায় নেমে স্লোগান দিলে কাজ হবে না। আপনাদেরকে তাঁতীদের জন্য কাজ করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button