অপরাধ-আদালতচট্রগ্রামজেলার খবর

দেড় লাখে রফা, ৬ হাজার ইয়াবা হয়ে গেল ৮৭০ পিস!

আমিরজাদা চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ১২ মার্চ দুপুরের ঘটনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুর এলাকা থেকে পুলিশের ‘তালিকাভুক্ত মাদক কারবারী’ বিজয়নগরের সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মিরাসানি গ্রামের মো. জসীম খাকে ৫ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা।

ঘটনাস্থলেই ডিবি পুলিশের সঙ্গে রফাদফা হয় জসীমের। স্ত্রী মুক্তা আক্তারকে ফোন করে নগদ দেড় লাখ টাকা আনায় জসীম। পরে জসীমের কাছে পাওয়া ৬ হাজার ইয়াবার বিপরীতে মাত্র ৮৭০ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখায় ডিবি পুলিশের এসআই মো. আনিসুজ্জামান। ওই মামলায় জসীম গ্রেফতার হলেও দুই সপ্তাহের ব্যবধানে জামিনে বের হয় যায়!

ইয়াবা কারবারী সঙ্গে আর্থিক রফাদফার পর ঘটনাস্থল সুলতানপুরের পরিবর্তে দেখানো হয় বিয়াল্লিশ্বর-পুনিয়াউট বাইপাস সড়ক। জব্দ করা ৬ হাজার ইয়াবার বর্তমান বাজারমূল্য সাড়ে ৯ লাখ টাকা! সেই ইয়াবাও উধাও করে দেয় ডিবি পুলিশ। মাদক জব্দের স্থানেরও আমূল পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। মাদক মামলার স্বাক্ষী হিসেবে পুলিশের দুজন সোর্সকেই ব্যবহার করা হয়! এত বড় একটি মাদকের চালান জব্দের ঘটনা স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকেও আড়াল করা হয়।

এর আগে, গেল ৩০ ডিসেম্বর বিজয়নগরের কাশিনগরের জসিম ওরফে কুশাই জসিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০০ বোতল ভারতীয় এসকফ সিরাপ জব্দ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। সেখান থেকে তারা ২৫ বোতল গায়েব করে দেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদক কারবারী মো. জসীম খা বিজয়নগরের একটি শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তার ওই সিন্ডিকেটে সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশারফ মিয়া, নলগড়িয়া গ্রামের দীনু মিয়া ওরফে দীনা, আল আমিন ও হাবির, পার্শ্ববর্তী আখাউড়া উপজেলার আমোদাবাদ গ্রামের মাদক কারবারী মোবারক ও মনা দাস, কাশিনগরের ভাতিজা সেন্টু, রোমান ও রিপনকে নিয়ে মাদক কেনাবেচা চালিয়ে যাচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মাদক কারবারে পরিবর্তন আসেনি। সেখানকার বিজয়নগর সীমান্তের বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখনো মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিজয়নগর থানা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গেল ছয় মাসে সাড়ে ১৩ হাজার পিস ইয়াবা, ১৩০৬ বোতল এসকফ ও ৫৫৬ বোতল ফেনসিডিল ও ৩৮৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানে ৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসব ঘটনায় ৬৪টি মামলা হয়েছে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি শহীদুল ইসলাম বলেন, ডিবি পুলিশের কোন সদস্যের ব্যাপারে এরকম কোন অভিযোগ এখনো আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে তা যাচাইয়ের পর সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজয়নগর থানার ওসি মো. রওশন আলী বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বদ্ধপরিকর। থানায় কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তারা নিয়মিত মাদক উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তাদের হাতে নিয়মিত মাদকদ্রব্যসহ আসামিও আটক হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি যোগদানের পর অভিযোগ পেয়ে এসআই ইসহাককে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে ।

নিউজ নাউ বাংলা/ ১৭ এপ্রিল ২০২৫/ জেডআরসি

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button